পদ্মাবতী - Padmaavat এবং ইতিহাস বিকৃতি

ভারতের বর্তমান উগ্রবাদী বিজেপি সরকার যেভাবে মুসলিমবিদ্বেষ ছড়াচ্ছে এবং অতীতের গৌরবময় মুসলিম শাসন সম্পর্কে ভারতবাসীকে যেভাবে অকৃতজ্ঞ বানানোর মাস্টার প্লান তৈরি করেছে তারই অংশ হিসেবে সঞ্জয়লীলা বানশালী পদ্মাবতী সিনেমাটি তৈরি করে থাকতে পারেন।

কারণ সকলেরই এ কথা ভালো করে জানা যে, চেঙ্গিস খানের পুত্র চাগতাই খানের নির্দেশে ১২৯৭ সাল থেকে ১৩০৬ সাল অবধি প্রায় প্রতি বছরই দুর্ধর্ষ-মোঙ্গলরা ভারতবর্ষের ওপর ক্রমাগত আক্রমণ চালায়। প্রতিটি যুদ্ধেই মোঙ্গলরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। একমাত্র ভারতবর্ষের সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি ছাড়া তৎকালীন দুনিয়ার কোনো সুপার পাওয়ারই মোঙ্গল বাহিনীর সামনে টিকেনি। মোঙ্গলদের আক্রমণে অনেক বড় বড় রাজধানী ইতিহাসের পাতায় আছে।

কিন্তু ভুগোল থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। কত রাজা, কত সেনাপতি, কত সৈন্য কিংবা কত মানুষ যে আহত-নিহত হয়েছেন তা আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারেননি। ঐতিহাসিকরা একবাক্যে স্বীকার করেন যে, আলাউদ্দিন খিলজির মতো প্রতিভাধর সাহসী যোদ্ধা যদি দিল্লির সিংহাসনে না থাকতেন তাহলে ভারতবর্ষে মোঙ্গলদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারত না। সে ক্ষেত্রে মোঙ্গল আক্রমণে দিল্লির অস্তিত্ব বিলীন হতো, কোটি কোটি ভারতবাসী মারা পড়ত এবং ভারতবর্ষ চীনের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হতো।

এ কারণে বিবেকবান ভারতবাসী ঐতিহাসিক দায় মেটানোর জন্য সর্বদা আলাউদ্দিন খিলজির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। অন্য দিকে, আধুনিক ভারতের যে মানচিত্র তা মোটোমুটি সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজির সময়কার সাম্রাজ্যের প্রতিরূপ। অর্থাৎ তিনিই ভারতের ইতিহাসে একমাত্র শাসক যিনি আধুনিককালের মতোই সরাসরি উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের ওপর দিল্লির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

রাজ্য জয়, মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করা, কেন্দ্রীয় শাসন, মূল্য নিয়ন্ত্রণ, স্থায়ী সেনাবাহিনী গঠন, রাজস্ব নীতি, বিচারব্যবস্থা এবং জনহিতকর কাজে সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজির যে কৃতিত্ব তার জন্য ভারতবাসীর উচিত এই মহান শাসকের প্রতি কিয়ামত পর্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকা। কিন্তু সঞ্জয়লীলা বানশালীর ‘পদ্মাবতী’ সিনেমার কারণে অনেক ভারতীয়ের ওপর শয়তানের আছর পড়বে। তারা একজন মহান শাসককে তার প্রাপ্য মর্যাদা না দিয়ে তাকে উন্মাদ যৌনদানব ভাববে এবং নিজেদের অকৃতজ্ঞ সম্প্রদায়ে পরিণত করবে।

বস্তুত, পদ্মাবতী সিমেনাটি কোনো ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়নি। পদ্মাবতী বিতর্ক পার্লামেন্টারি প্যানেলের মুখোমুখি হয়েছিলেন পরিচালক। অবশেষে তিনি জানিয়ে দেন এই ছবিটি ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়নি। বরং ১৫৪০ খ্রীষ্টাব্দে সুফি কবি মালিক মুহাম্মদ জয়শির লেখা 'পদ্মবত'-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করলেও মহান শাসক সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজিকে দর্শকরা একজন উন্মাদ ও বিকৃত রুচির সমকামী এবং বহুগামী বিবেকহীন ‘যৌনদানব’ হিসেবে দেখতে পাবে।