শহর-ই-জোহাক

শহর-ই-জোহাক (বাংলা আক্ষরিক অর্থ: ‘রক্ত নগরী’) আফগানিস্তানের বামিয়ান উপত্যকায় অবস্থিত একটি ত্রয়োদশ শতাব্দীর দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। উঁচু টিলায় অবস্থিত এই দুর্গটি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ধ্বংস হওয়া পূর্ব পর্যন্ত বামিয়ান উপত্যকা রক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত একটি শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হত।

ঘুড়ি সাম্রাজ্যে শাসনামলে বামিয়ান একটি শক্তিশালী ও মিশ্রিত সাম্রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হলে তা রক্ষার উদ্দেশ্যে এই দুর্গটি অত্যন্ত শক্তিশালী করে গড়ে তোলা হয়। ঘুড়িদের পতনের পর সমগ্র বামিয়ান উপত্যকার সাথে সাথে এই দুর্গটি উত্তরের খাওয়ারিজম সালতানাতের অধীনে আসে। ১২২১ খ্রিস্টাব্দে চেঙ্গিস খানের মঙ্গল সেনা বামিয়ান উপত্যকায় প্রবেশ করলে তাদের হাতেই এই দুর্গের পতন ঘটে।

অবরোধ চলাকালীন দুর্গ থেকে ছোড়া একটি তীরে চেঙ্গিস খানের নাতি মুতুকানের মৃত্যু ঘটলে মঙ্গোলরা আক্রোশ বশত সমস্ত উপত্যকা জুড়ে গণহত্যা চালায়।  এই যুগে সে সময় ৩০০০ মানুষ ছিল। তারা কেউই এই হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি। আজ এই দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ‘রক্ত নগরী’ নামটিও সম্ভবত এই গণহত্যার নারকীয়তা থেকেই উদ্ভূত।

এই নারকীয়তা ছিল এত ভয়াবহ যে, অন্তত চার দশক এই শহরে আর কোনো বসতি স্থাপন হয়নি। পরবর্তীকালে যখন শহরটি আবার গড়ে ওঠে, এই দুর্গটি তার অতীতের সাক্ষী বয়ে একইভাবে পড়ে থাকে। তার ধ্বংসাবশেষ ধ্বংসস্তূপের ওপর আর কোন পুনর্নির্মাণ চালানো হয়নি। বিখ্যাত বৌদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ বামিয়ানের ঐতিহাসিক পর্বতগাত্র থেকে পূর্বদিকে ১৫ কিলোমিটারর দূরে এই দুর্গটির ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত।