হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম তারিখ ও বংশ পরিচয়

হযরত মুহাম্মদ (সা.)

অধিকাংশ আলেমগণ এই কথার উপর একমত যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাব রবিউল আওয়াল মাসের সেই বছর হয়েছিল, যে বছর আসহাবে ফীল (হস্তী বাহিনী) কা’বা ঘর আক্রমণ করেছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আবাবীল নামক নগণ্য পক্ষীকুলের দ্বারা তাদেরকে পরাজিত করেছিল। পবিত্র কুরআনে সুরা ফীলে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা রয়েছে।

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম তারিখ

প্রকৃতপক্ষে আসহাবে ফীলের ঘটনাটিও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র জন্ম সম্পর্কিত বরকতসমূহের সূচনা স্বরূপ। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সেই ঘরে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন, যা পরবর্তীকালে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ভাই মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফের হস্তগত হয়। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে আসহাবে ফীলের ঘটনাটি ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দে ২০ শে এপ্রিল সংঘটিত হয়েছিল। এতে বুঝা যায় যে, মহানবী (সা.) এর জন্ম, হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মের ৫৭১ বৎসর পরে হয়েছিল। এক দিকে পৃথিবীর অর্চনালয়ে নবুওয়তের সূর্য প্রকাশিত হল, আর অন্য দিকে পারস্য রাজ কিসসার রাজ প্রাসাদের ১৪টি গম্বুজ ধ্বসে পড়ে, পারস্যের শ্বেত উপসাগর একেবারে শুকিয়ে যায়, পারস্যের অগ্নি মণ্ডপের হাজার বছরের প্রজ্বলিত অগ্নি স্বেচ্ছায় নিভে যায়, যা কখনও নির্বাপিত হয়নাই।

(সিরাতে মোগলতাই পৃ: ৫)

হযরত মুহাম্মদ (সা.)
হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম তারিখ ও বংশ পরিচয়

মূলত এটি ছিল অগ্নি পূজা ও যাবতীয় গোমরাহীর সমাপ্তির পূর্ব ঘোষণা এবং পারস্য ও রোম রাজত্বের পতনের ইঙ্গিত। [ সহীহ হাদিস সমূহে বর্ণিত আছে যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের সময় তার সম্মানিতা মাতার পেট থেকে এমন একটি নূর প্রকাশিত হয় যার দ্বারা পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম আলোকিত হয়ে যায়। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে যে নবীজী (সা.) ভূমিষ্ঠ হয়ে উভয় হাতের উপর ভর দেয়া অবস্থায় ছিলেন অতঃপর তিনি এক মুষ্টি মাটি তুলে আকাশের দিকে তাকালেন।

-(মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া)

হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আগমনের পূর্বে প্রকাশিত বরকত সমুহ

সূর্যোদয়ের পূর্বে সুবেহ সাদিকের বিশ্বব্যাপী আলাে ও প্রান্তের লালিমা পৃথিবীকে সূর্যোদয়ের সুসংবাদ দেয়। ঠিক সে ভাবে নবুওয়তের সূর্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উদয় হবার সময় যখন ঘনিয়ে এলো, তখন পৃথিবীর চার পার্শ্বে এমন অনেক ঘটনা সমূহ প্রকাশ পেতে লাগল, যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের বার্তা বহন করছিল। হাদিস তত্ত্ববিদ ও ঐতিহাসিকদের পরিভাষায় এগুলোকে ইরহাসাত বা ভিত্তিসমুহ বলা হয়। যেহেতু এ ধরণের অলৌকিক বিষয়গুলি নবুওয়তের পূর্বাভাস ও লক্ষণ বিশেষ, তাই এ সকল বিষয়গুলিকে ইরহাসাত বা ভিত্তি সমূহ বলা হয়।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সম্মানিতা মাতা বিবি আমিনা থেকে বর্ণিত আছে যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন তাঁর মাতার গর্ভে স্থিতিশীল হলেন, স্বপ্নযোগে তাকে সুসংবাদ দেয়া হল যে, “যে সন্তানটি তোমার গর্ভে রয়েছে তিনি উম্মতের দলপতি। তিনি যখন ভূমিষ্ঠ হবেন তখন তুমি এই দোয়া করবে ? আমি তাকে এক আল্লাহর আশ্রয়ে অর্পণ করলাম এবং তার নাম রেখো মুহাম্মদ (সা.)”।

– (সিরাতে ইবনে হিশাম)

বিবি আমিনা আরও বর্ণনা করেন, আমি কোনো মহিলাকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) থেকে বেশী হালকা ও সহজ গর্ভ ধারণ করতে দেখিনি। অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় সাধারণ মহিলাদের যে বমি বমি ভাব বা অলসতা ইত্যাদি হয়ে থাকে এসব কিছুই আমার হয়নি।

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশ পরিচয়

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পবিত্র বংশ সকল বংশাবলী থেকে অতি পবিত্র ও সম্ভ্রান্ত। ইহা এমনি একটি বাস্তব সত্য কথা, যা তার চরম দুশমন ও মক্কার কাফেররা তা অমান্য করতে পারেনি। রোমের বাদশাহ নাজ্জাশীর সামনে হযরত আবু সুফিয়ান (রা.) কাফের থাকাবস্থায় তা স্বীকার করেছিলেন। অথচ তিনি তখন চেয়েছিলেন যে, যদি কোনো সুযোগ-সুবিধা হয়ে যায়, তাহলে মহানবী (সা.) এর উপর দোষারোপ করবেন।


►► আরো পড়ুন: হযরত মুহাম্মদ সা: এর পবিত্র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী

►► আরো পড়ুন: যেভাবে কাটতো রাসুল (সা.)-এর দিনরাত

►► আরো পড়ুন:  ইসলামে দাড়ি রাখার বিধান ও এর উপকারিতা

►► আরো পড়ুন: অজুতে নাকে পানি দেওয়ার উপকারিতা

►► রাসুল (সা.)-এর সীরাত সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন নবীজি.কম


পিতার পক্ষ থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)- বংশধারা

মুহাম্মদ (সা.) ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম ইবনে আবদে মানাফ ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব ইবনে মুররা ইবনে কা’ব ইবনে লয়াই ইবনে গালিব ইবনে ফেহর ইবনে মালিক ইবনে নজর ইবনে কিনানা ইবনে খুজাইমা ইবনে মুদরিকা ইবনে ইলিয়াছ ইবনে মুজার ইবনে নিজার ইবনে মা’আদ ইবনে আদনান।

এই পর্যন্ত বংশ ধারা উম্মতের ঐক্যমতে প্রমাণিত। এবং এখান থেকে আদম (আলাইহিস সালাম) পর্যন্ত বংশ তালিকায় মতানৈক্য থাকায় তার বিবরণ পরিত্যাগ করা হল।

মাতার পক্ষ থেকে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশ তালিকা:

মুহাম্মদ (সা.) ইবনে আমিনা বিনতে ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ ইবনে জুহুরা ইবনে কিলাব* ইবনে মুররা ইবনে কা’ব ইবনে লয়াই ইবনে গালিব ইবনে ফেহর ইবনে মালিক ইবনে নজর ইবনে কিনানা ইবনে খুজাইমা ইবনে মুদরিকা ইবনে ইলিয়াছ ইবনে মুজার ইবনে নিজার ইবনে মা’আদ ইবনে আদনান।

*ইহা দ্বারা বুঝা যায় যে, কিলাব ইবনে মুররা পর্যন্ত মহানবী (সা.)- এর পিতা ধারা একসাথে মিলিত হয়ে যায়।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সম্মানিত পিতার ইন্তেকাল

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তখনও জন্ম গ্রহণ করেন নি। তাঁর সম্মানিত পিতা আব্দুল্লাহকে তদীয় পিতা আব্দুল মুত্তালিব মদিনা থেকে খেজুর নিয়ে আসার হুকুম দেন। আব্দুল্লাহ তাঁকে গর্ভাবস্থায় রেখে মদিনায় চলে যায়। সর্বসম্মতিক্রমে সেখানেই তাঁর ইন্তেকাল হয়। পিতৃছায়া জন্ম হবার পূর্বেই মাথার উপর থেকে উঠে যায় ।

-(সিরাতে মোগলতাই পৃ: ৭)

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সম্মানিতা মাতার ইন্তেকাল

যখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বয়স চার বা ছয় বৎসর, তখন মদিনা থেকে ফেরার পথে আবওয়া নামক স্থানে তার সম্মানিতা মাতাও দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করলেন।

-(মোগলতাই, পৃ: ১০)।

বাল্যকাল, বয়স ছয় বৎসর। পিতার ছায়াতলে পূর্বেই উঠে গিয়েছিল । মায়ের স্নেহের কোলও আজ শেষ হয়ে গেল। কিন্তু এই এতীম শিশুটি যে রহমতের কোলে লালন পালন হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। তিনি তাে এই সকল কারণ সমুহের (সহায় সম্বলের) মুখাপেক্ষী নন।

আবদুল মুত্তালিবের ইন্তেকাল

পিতা-মাতার পর মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর দাদা আব্দুল মুত্তালিবের আশ্রয়ে ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা দেখাতে চেয়েছিলেন যে, এই নব জাতক শুধু রহমতের কোলেই লালিত পালিত হবে। সমস্ত কার্য কারণের কারক যিনি (আল্লাহ) তিনি স্বয়ং লালন পালনের জিম্মাদার হলেন। যখন তার বয়স আট বৎসর দুই মাস দশ দিন হল, তখন আব্দুল মুত্তালিবও পৃথিবী থেকে চির বিদায় গ্রহণ করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *