রাসুল সাঃ এর আংটি/খতম বা সীল তৈরির কারণ
খায়বারের যুদ্ধের পর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন অনারব রাজা-বাদশাহদের কাছে দাওয়াত-পত্র প্রেরণের সংকল্প (ইচ্ছা) করেন।
তখন তাঁকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, অনারবগণ সীলমোহর ছাড়া চিঠি গ্রহণ করে না। তখন তিনি একটি আংটি তৈরি করান।
আংটিতে খোদাই করে ‘محمد رسول الله’ অংকিত ছিল। ‘محمد ’ এক লাইনে, ‘رسول ’ আরেক লাইনে এবং ‘الله’ আরেক লাইনে লেখা ছিল।
রাসুল (সা.)-এর আংটিটি ছিল রৌপ্য নির্মিত। রাসুল (সা.)-এর স্বীয় যুগে তা ব্যবহার করতেন।
এরপর আবু বকর (রা.) এর শাসনামলে রাষ্ট্রীয় কাজে তিনি ব্যবহার করতে। এরপর উমর (রা.) তার খেলাফতের কাজে এটি ব্যবহার করেন।
অতঃপর উসমান (রা.) ও স্বীয় খেলাফতে রাষ্ট্রীয় কাজে এটি ব্যবহার করতেন।
একদা তিনি বীরে আরিসের (আরিস নামক কূপ) পার্শ্বে বসা ছিলেন। কূপের অপর পার্শ্বে ছিলেন হযরত মুআইকিব (রা.)।
হযরত উসমান (রা.) তার হাত থেকে মুআইকিব (রা.) কে দেওয়ার সময় আংটিটি কূপে পড়ে যায়। এরপর তিন দিন কূপটিতে আংটিটি খোঁজাখুঁজি করা হয়।
কিন্তু আংটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশেষে উসমান (রা.) নতুন আরেকটি আংটি তৈরির নির্দেশ দেন।
রাসুল (সা.) ডান হাতে আংটি পরিধান করতেন এবং তা সীলমহরের কাজে ব্যবহার করতেন।
রাসুল (সা.)-এর আংটি সম্পর্কীয় কতিপয় হাদিস
عن علي بن ابي طالب : ان النبي صلى الله عليه وسلم كان يلبس خاتمه في يمينه
আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) হতে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান হাতে আংটি পরিধান করতেন।
، عن انس بن مالك ، قال : ” اراد رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يكتب الى بعض الاعاجم فقيل له
انهم لا يقرءون كتابا الا بخاتم ، فاتخذ خاتما من فضة ونقش فيه محمد رسول الله “
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কতিপয় অনারব দেশের শাসনকর্তাদের নিকট চিঠি লেখার ইচ্ছা করেন।
তখন তাঁকে বলা হয়, তারা মোহরাংকিত ছাড় কোন চিঠিই পড়ে না।
তখন তিনি রূপার একটি আংটি তৈরি করে নেন এবং তাতে ‘محمد رسول الله’ খোদাই করে ন
►► আরো পড়ুন: খতনা করার উপকারিতা
►► রাসুল (সা.)-এর সীরাত সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন আলকাউসার.কম এ
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যেসব বাদশাহর নামে চিঠি পাঠিয়েছেন :
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যেসব রাজা বাদশাহ ও শাসকদের নামে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি প্রেরণ করেন তাদের কয়েকজনের তালিকা নিম্নে দেয়া হলো :
১. রোমের সম্রাট হিরাক্লিয়াস : সাহাবী দিহইয়া কালবী (রা.) তার কাছে চিঠি নিয়ে যান ।
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়াতের প্রতি তার বিশ্বাস থাকার পরও তিনি ঈমান আনেননি । তবে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর চিঠির কোন অবমাননাও করেননি ।
২. পারস্য সম্রাট পারভেজ : আবদুল্লাহ ইবনে হুজাইফা আস – সাহমী (রা.) তার কাছে চিঠি নিয়ে যান ।
পাপী পারভেজ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর চিঠি ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলে । অতঃপর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর বদ দু’আর ফলে তার রাজ্যও ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যায় ।
৩. আবিসিনিয়ার অধিপতি নাজ্জাশি : এ চিঠির বাহকে সাহাবী আমর ইবনে ইমাইয়া । যে নাজ্জাশি হাবশায় মুসলমানদেরকে স্থান দিয়েছিলেন তাঁর নাম আমবাসা ।
ষষ্ঠ হিজরি সনে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নবম হিজরি সনে মারা যান । মদিনায় রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর গায়েবানা জানাজা আদায় করেন ।
৪ . মিসরের রাজা মুকাওসিস : তার কাছে চিঠি নিয়ে যান হাতিব ইবনে আবী বালতা’আ।
তিনি ইসলাম কবুল করেননি । তবে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট হাদিয়া প্রেরণ করেন ।
৫. বাহরাইনের রাজা মুনযির ইবনে সাদি : আলা ইবনে হাযরাম (রা.) তার কাছে চিঠি নিয়ে যান । তিনি ইসলাম কবুল করেন এবং ইসলামী খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান।
৬. আম্মানের রাজা : সে সময় আম্মানে ছিল দু’জন বাদশাহ । রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমর ইবনে আস এর মাধ্যমে তাদের কাছে চিঠি প্রেরণ করেন । চিঠি পেয়ে তাঁরা উভয়েই ইসলাম গ্রহণ করেন ।