ইসলামে মৌলিক ফিতরাত পাঁচটি

ফিতরাত

ফিতরাত কি?

(الْفِطْرَةُ) ফিতরাত অর্থ স্বভাবজাত অভ্যাস। এবং ইসলামের ফিতরাত সর্বমোট পাঁচটি।

পরিভাষায় ফিতরাত বলা হয়, মানুষের ঐ স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যকে, যে বৈশিষ্ট্যের উপর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কাজি ইয়াজ (রহ.)  এবং অন্যান্য হাদিস বিশারদগণ বলেন: হাদিসে যে ফিতরাতের কথা বলা হয়েছে, এর ব্যাখ্যা ‘সুন্নতে কাদিম’ বলে করা হয়ে থাকে।

অর্থাৎ এ বৈশিষ্ট্যগুলো এমন, যা সকল নবী-রাসুলগণ গ্রহণ করেছেন এবং সকলের শরিয়ত এ ব্যাপারে একমত। এগুলো যেন এমন বৈশিষ্ট্য, যার উপর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

‘আল্লামা সুয়ুতি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ফিতরাত’ শব্দের যত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তন্মধ্যে এ ব্যাখ্যাটি সর্বোত্তম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

ফিতরাত
ইসলামে মৌলিক ফিতরাত

ইসলামে মৌলিক ফিতরাত পাঁচট

عن ابي هريرة – رضي الله عن– قال. قال رسول الله  صلى الله عليه وسلم : الفطرة خمس. الختان، والاستحداد. وقص الشارب. وتقليم الاظفار، ونتف الابط

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, পাঁচটি জিনিস ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। ১. খতনা করা। ২. নাভির নিম্নের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা। ৩. গোঁফ কাটা। ৪. নখ কাটা। ৫. বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা।

এখানে যে পাঁচটি ফিতরাত তথা স্বভাবজাত সুন্নত বা বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে তার একটি হলো :

الْخِتَانُ ‘খিতান’ এর অর্থ হলো খৎনা করা। খৎনা অর্থ সকলেরই জানা। খৎনা সকল নবীদেরই পুরাতন সুন্নত। আমাদের জন্যও খৎনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত, এতে কারো দ্বিমত নেই।

তবে এ সুন্নতটির গুরুত্ব ও পর্যায় নিয়ে ‘উলামার মাঝে কিছুটা দ্বিমত লক্ষ্য করা যায়।

ইমাম শাফেয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) সহ অনেক আলিমের নিকট খৎনা করা সুন্নতটি ওয়াজিব। অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কর্ম হিসেবে এটি সুন্নত।

তাঁর পালিত একটি নিয়ম হলেও এ সুন্নতটি আদায় করা সকলের ওপর ওয়াজিব। অপরদিকে ইমাম মালিকসহ অধিকাংশ আলিমদের মতে খৎনার হুকুম সুন্নত।


►► আরো পড়ুন: তাকওয়া অর্থ কি? কেন তাকওয়া অবলম্বন করা উচিত

►► আরো পড়ুন: খতনা করার উপকারিতা

►► রাসুল (সা.)-এর সীরাত সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন আলকাউসার.কম


ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) সহ অনেকেই খৎনা করাকে সুন্নত বললেও এর গুরুত্ব সকলের নিকট ওয়াজিব পর্যায়ের।

কেননা খৎনা করা ইসলামের এক বিশেষ নিদর্শন বলে গণ্য। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। বাহ্যিক নাপাকি থেকে পবিত্রতা রক্ষার ক্ষেত্রেও খৎনার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

الِاسْتِحْدَادُ স্বভাবজাত সুন্নতের আরেকটি সুন্নত হলো ‘ইসতিহদাদ’। ‘ইসতিহদাদ’ এর শাব্দিক অর্থ হল: ‘হাদিদ’ বা লৌহ বিশেষের ব্যবহার।

এর দ্বারা ক্ষুর দ্বারা নাভির নিচের পশম কাটা উদ্দেশ্য। ক্ষুর দ্বারা নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা সুন্নত। এর দ্বারা এই স্থানকে আবর্জনামুক্ত ও পরিষ্কার রাখা উদ্দেশ্য।

قَصُّ الشَّارِبِ অর্থাৎ গোঁফ কর্তন করা। অর্থাৎ উপরের ঠোটের উপর গজানো পশমকে একেবারে মূল থেকে না ছেঁটে কেটে নেয়া সুন্নত।

তবে গোঁফ কর্তনের ব্যাপারে হাদিসে বিভিন্ন ধরনের শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে। কাটা, ছাটা, কামানো, ছোট করা সব ধরনের শব্দই গোঁফ কর্তনের নির্দেশে ব্যবহার করা হয়েছে।

তাই উলামা এ ব্যাপারে মতানৈক্য পোষণ করেন। কারো মতে কাটা সুন্নত, আবার কারো মতে ছাটা সুন্নত, আবার কারো মতে উভয়টার অবকাশ রয়েছে।

ইমাম তাবারী এ ব্যাপারে উভয় মতামত আলোচনা করে বলেন, সুন্নতে উভয়টিরই অবকাশ পাওয়া যায়। তাই কোন বিরোধ নেই।

تَقْلِيمُ الْأَظْفَارِ বা নখ কর্তন করা। স্বভাবজাত সুন্নতের আরেকটি হলো হাত ও পায়ের নখ কেটে নেয়া। ইমাম নববি (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর শারহু মুসলিমে লিখেন, নখ কাটার বেলায় মুস্তাহাব হলো, প্রথমে হাতের নখ কাটা এবং পরে পায়ের নখ কাটা।

হাতের মধ্যে আবার প্রথমে ডান হাতের শাহাদাত অঙ্গুলির নখ, এরপর মধ্যমা, এরপর অনামিকা, এরপর কনিষ্ঠা, এরপর বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কাটবে।

তারপর বাম হাতের প্রথমে কনিষ্ঠা, এরপর অনামিকা- এই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষে বৃদ্ধাঙ্গুলিতে আসবে। এরপর ডান পায়ের কনিষ্ঠা থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বাম পায়ের কনিষ্ঠায় গিয়ে শেষ করবে।

এভাবে কেউ নখ কাটার মুস্তাহাব পদ্ধতি।

نتفُ الإِبطِ  বা বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা। বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা সবার ঐকমত্যে সুন্নত। যে ব্যক্তি উপড়িয়ে ফেলতে সক্ষম তার জন্য এটাই উত্তম। তবে কামিয়ে ফেললে বা চুনা দ্বারা তুলে নিলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে

উল্লেখ্য যে, এ হাদিসে ফিতরাত বা স্বভাবজাত সুন্নত পাঁচটির কথা বলা হয়েছে। আবার অন্য হাদিসে বলা হয়েছে-

عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَالاِسْتِنْشَاقُ بِالْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الإِبِطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ

দশটি বিষয় ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। গোঁফ ছাঁটা, দাড়ি ছেড়ে দেয়া, মিসওয়াক করা, নাকে (অজু করার সময়) পানি দেওয়া, নখ কাটা, আঙ্গুলের জোড়া বা গাঁট ধৌত করা, বগলের লোম উপড়ে ফেলা, নাভির নিচের লোম কর্তন করা, পানি দিয়ে ইসতিঞ্জা করা।

এখানে দশটি ফিতরাতের কথা উল্লেখ করে নয়টি বলার পর বর্ণনাকারী বলেন, আমি দশ নাম্বারটি ভুলে গেছি। তবে তা কুলি করা হতে পারে।

লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এ হাদিসে অতিরিক্ত যে ফিতরাতের কথা বলা হয়েছে যা উপরের হাদিসে নেই।

সেগুলো হলো, দাড়ি ছেড়ে দেয়া, মিসওয়াক করা, নাকে (অজুতে) পানি নেয়া, আঙ্গুলের জোড়া বা গাঁট ধৌত করা, ইসতিঞ্জা করা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *