মহানবীর সিরিয়া সফর

মহানবীর সিরিয়া সফর

রাসুল (সা.)-এর যখন বারো বয়সে উপনীত হন, তখন তাঁর চাচা আবু তালেব ব্যবসার উদ্দেশ্যে মহানবী (সা.) কে সাথে নিয়ে সিরিয়া সফর করেন।

পথিমধ্যে তাইমা নামক স্থানে যাত্রা বিরতি করেন। এটি ছিল রাসুল (সা.)-এর প্রথম সিরিয়া সিরিয়া সফর।

সিরিয়া সফরে মহানবী সম্পর্কে এক ইহুদী পণ্ডিতের ভবিষ্যৎ বানী

তিনি তাইমা নামক স্থানে অবস্থান করতে ছিলেন, ঘটনা ক্রমে ইহুদী এক বড় পণ্ডিত যাকে ‘বুহাইরা রাহেব’ বলা হত।

সে মহানবী (সা.) এর নিকট দিয়ে গমনকালে তাঁকে দেখে আবু তালেবকে সম্বোধন করে বলল: “আপনি কি তার প্রতি দয়া পোষণ করেন এবং তাঁর হেফাজত কামনা করেন?” আবু তালেব বলল।

নিশ্চয়! এ কথা শুনে বুহাইরা রাহেব আল্লাহর কসম করে বললেন: “আপনি যদি তাকে শাম (সিরিয়া) দেশে নিয়ে যান তাহলে ইহুদীরা তাকে হত্যা করে ফেলবে।

কেননা, ইনি আল্লাহর নবী যিনি ইহুদী ধর্মকে বিলুপ্ত করে দিবেন। আমি তার গুণাবলী সমূহ আসমানি কিতাবের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি।”

বুহাইরা রাহের যেহেতু তাওরাতের বড় পণ্ডিত ছিলেন এবং মহানবী (সা.) কে দেখা মাত্রই চিনতে পারলেন।

যে, ইনিই শেষ নবী; যিনি তাওরাতকে বিলুপ্ত করবেন এবং ইহুদী ধর্মীয় পণ্ডিতদের রাজত্বের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন।

বুহাইরার কথায়, আবু তালেবের মনে ভীতি সৃষ্টি হল। তিনি মহানবী (সা.) কে মক্কায় ফেরত পাঠিয়ে দিলেন।

ব্যবসার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয়বার সিরিয়া সফর

মহানবীর সিরিয়া সফর
মহানবীর সিরিয়া সফর

মক্কা মুকাররামায় হযরত খাদিজা ছিলেন একজন ধনী, সম্ভ্রান্ত, বুদ্ধিমতী অভিজ্ঞতা সম্পন্না মহিলা।

যে সকল দরিদ্র ব্যক্তিদেরকে তিনি বিশ্বস্ত মনে করতেন। তাদেরকে তিনি নিজের মালামাল অর্পণ করে ব্যবসায়িক কাজে বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করে বলতেন।

এগুলো বিক্রি করে আসো। তোমাকে এই পরিমাণ লভ্যাংশ দেয়া হবে।


►► আরো পড়ুন: মহানবী ﷺ এর দুগ্ধপানের দিনগুলো

►► আরো পড়ুন:  হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে বিদ্বেষীদের জবাব

►► আরো পড়ুন: অজুতে নাকে পানি দেওয়ার উপকারিতা

►► রাসুল (সা.)-এর সীরাত সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন নবীজি.কম


মহানবী (সা.) যদিও তখনও নবুওয়াত প্রাপ্ত হননি। কিন্তু তাঁর ধর্মপরায়ণতা ও বিশ্বস্ততা গোটা মক্কাবাসীর নিকট প্রসিদ্ধ ছিল।

তিনি আল-আমিন (বিশ্বস্ত) উপাধিতে ভূষিত ছিলেন। তাঁর এই সুখ্যাতির কথা খাদিজা (রা.)-এর নিকট গোপন ছিল না।

এ জন্যই তিনি তার ব্যবসার দায়দায়িত্ব মহানবী (সা.) এর উপর অর্পণ করে তাঁর বিশ্বস্ততার দ্বারা উপকৃত হতে চেয়েছেন।

তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নিকট বলে পাঠালেন যে, যদি আপনি আমার ব্যবসার মালামাল শামে (সিরিয়ায়) নিয়ে যান।

তাহলে আমি আমার একটি গোলাম আপনার খেদমতের জন্য সফর সঙ্গী হিসেবে সাথে পাঠাবো এবং অন্যান্য লোকদেরকে যে পরিমাণ লভ্যাংশ প্রদান করা হয় তদপেক্ষা বেশী দিয়ে আপনার খেদমত করব।

মহানবী (সা.) যেহেতু স্বভাবত সাহসী ও প্রশস্ত চিন্তার অধিকারী ছিলেন।

তাই সঙ্গে সঙ্গে এই দীর্ঘ সফরের জন্য প্রস্তুত হলেন। খাদিজা (র.)-এর গোলাম মাইসারাকে সঙ্গে নিয়ে ১৬ই জিলহজ্জ সিরিয়ার দিকে রওয়ানা হন।

সেখানে মালামালগুলো অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে অধিক লাভে ব্যবসায়িক পণ্যগুলো বিক্রয় করেন এবং শাম থেকে অন্যান্য মালামাল ক্রয় করে ফিরে আসেন।

মক্কায় পৌঁছে আনীত মালামাল হযরত খাদিজা (রা.) কে অর্পণ করলেন। খাদিজা (রা.) সেগুলোকে মক্কায় বিক্রয় করলে দ্বিগুণের কাছাকাছি লাভ অর্জিত হয়।

শামের (সিরিয়ার) পথে মহানবী (সা.) যখন এক স্থানে যাত্রা বিরতি করলেন।

তখন নাস্তুরা নামক এক ইহুদী পণ্ডিত তাঁকে দেখতে পেলেন এবং আখেরি যামনার নবী (সা.)-এর সমস্ত আলামতসমুহ পূর্ব কিতাব সমূহে বর্ণিত হয়েছে, তা তাঁর মধ্যে দেখে চিনে ফেললেন।

রাহেব মাইসারাকে চিনতেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার সাথে এই লোকটি কে? মাইসারা উত্তরে বলল: তিনি মক্কার অধিবাসী কুরাইশ বংশের একজন ভদ্র যুবক”। নাস্তুরা বললেন: সময়ে এই যুবক নবী হবেন।

রাসুল (সা.) দুইবার সিরিয়া সফর করেন। প্রথমবার তাঁর চাচা আবু তালেবের সাথে।

আর দ্বিতীয়বার সিরিয়া সফর করেন হযরত খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসায়িক মালামাল সিরিয়ায় বিক্রি করার উদ্দেশ্যে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *