নবী সাঃ এর দুগ্ধপানের দিনগুলো এবং দুধ মাতার নাম

মহানবী

মহানবীর দুগ্ধপানের দিনগুলো মহানবীর দুধ মাতার নাম

আরবের সম্ভ্রান্ত গোত্রগুলোর মাঝে সাধারণত এরূপ প্রথা ছিল যে, তাঁরা নিজ শিশুদেরকে দুধ পান করানোর জন্য আশপাশের গ্রামগুলিতে পাঠিয়ে দিত।

যার দ্বারা শিশুদের শারীরিক সুস্থতা লাভ হত এবং বিশুদ্ধ আরবি ভাষা শিখতে পারত। এই জন্য গ্রামের মহিলারা দুগ্ধ পোষ্য শিশু সংগ্রহের জন্য প্রায়ই শহরে আসত।

সর্বপ্রথম শিশু মহানবী মুহাম্মদ (সা.) কে তাঁর সম্মানিতা মাতা এবং কিছু দিন পর আবু লাহাবের বাদী সুওয়াইবা দুধ পান করান। এরপর হালিমা সাদিয়া দুধ পান করান।

হযরত হালিমা সাদিয়া (রা.) বর্ণনা করেন যে, “আমি বনু সাদ গোত্রের মহিলাদের সঙ্গে দুগ্ধ পোষ্য শিশু আনার জন্য তায়েফ থেকে মক্কায় রওয়ানা হই। সে বৎসর দেশে দুর্ভিক্ষ ছিল।

আমার কোলেও একটি বাচ্চা ছিল। কিন্তু (অভাব ও উপবাসের দরুন) আমার স্তনে এই পরিমাণ দুধ ছিল না যা তার জন্য যথেষ্ট হত।

রাতভর সে ক্ষুধায় ছটফট করত এবং আমরা তার জন্য সারারাত জেগে কাটিয়ে দিতাম। আমাদের একটি উটনী ছিল কিন্তু তারও কোন দুধ ছিল না।

মক্কা সফরে যে লম্বা কান বিশিষ্ট উটনীর উপর সওয়ার হয়ে ছিলাম, সেটি এতই দুর্বল ছিল যে, সকলের সাথে পালা যোগে চলতে পারত না। এ কারণে সঙ্গীগণও বিরক্ত বোধ করছিল। পরিশেষে কষ্টের সাথেই এই ভ্রমণ সমাপ্ত হল।”

মহানবী
মহানবী ﷺ এর দুগ্ধপানের দিনগুলো

মক্কায় যখন পৌঁছল, তখন যে মহিলাগণই শিশু মুহাম্মদ (সা.) কে দেখত ও শুনত যে, তিনি এতিম, তখন কেও তাকে গ্রহণ করত না। কারণ, তাঁর পক্ষ থেকে বেশী পুরস্কার ও সম্মানী পাওয়ার আশা ছিল না। এদিকে হালিমার ভাগ্য তারকা চমকাচ্ছিল। তার দুধের স্বল্পতা তাঁর জন্যে রহমতে পরিণত হল। কেননা, দুধের স্বল্পতা দেখে কেহই তাকে বাচ্চা দিতে রাজি হয়নি।

হালীমা বলেন, “আমি আমার স্বামীকে বললাম: খালি হাতে ফিরে যাওয়াতে ভাল হবে না। খালি হাতে যাওয়ার চেয়ে এই এতীম শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া অনেক ভাল। স্বামী এই প্রস্তাবে সম্মত হলেন।”

এবং তিনি এই এতিম রত্নটিকে সাথে নিয়ে এলেন যার ফলে শুধু হালীমা ও আমিনার গৃহই নয় বরং পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে তার জ্যোতির দ্বারা উজ্জ্বল হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে হালিমা সাদিয়ার ভাগ্য খুলে গেল এবং দু’জাহানের সরদার মুহাম্মদ (সা.) ও তার কোলে এসে পড়লেন।

তাঁবুতে নিয়ে এসে দুধ পান করতে বসার সাথে সাথে বরকত শুরু হয়ে গেল। স্তনে এই পরিমাণ দুধ নেমে এল যে, মহানবী (সা.) এবং তার দুধ ভাই তৃপ্তি সহকারে পান করলেন এবং ঘুমিয়ে পড়লেন। এ দিকে উটনীর দিকে তাকিয়ে দেখলেন তার স্তন দুধে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। আমার স্বামী উটনীটির দুধ দোহন করছেন এবং আমরা সকলে তৃপ্তিসহ পান করলাম ও রাতভর শান্তিতে কাটালাম।


►► আরো পড়ুন: হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম তারিখ ও বংশ পরিচয়

►► আরো পড়ুন: যেভাবে কাটতো রাসুল (সা.)-এর দিনরাত

►► আরো পড়ুন:  হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে বিদ্বেষীদের জবাব

►► আরো পড়ুন: অজুতে নাকে পানি দেওয়ার উপকারিতা

►► রাসুল (সা.)-এর সীরাত সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন নবীজি.কম


অনেক দিন পর প্রথম রাত এটাই ছিল যে, আমরা শান্তিতে ঘুমিয়েছিলাম। এবার আমার স্বামীও আমাকে বলতে লাগলেন যে, হালিমা! তুমি তাে খুবই বরকতময় বাচ্চা নিয়ে এলে।

আমি বললাম: “আমারও এই বিশ্বাস যে, এই শিশুটি অত্যন্ত বরকতময় হবে। আমরা যখন সেই উটনীর উপর সওয়ার হলাম আল্লাহর কুদরতের লীলা দেখতে লাগলাম।

এখন সেই দুর্বল উটনীটি এত দ্রুত চলতে লাগলো যে, কারাে বাহন তাঁর নিকট পৌছতে পারছে না। আমার সহগামী মহিলাগণ আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগলেন যে, এটা কি সেই উটনী যার উপর তুমি সওয়ার হয়ে এসেছিলে?

এক পর্যায়ে আমরা বাড়ি পৌঁছে গেলাম। সেখানে ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ চলছিল। দুগ্ধবতী বকরীগুলো দুগ্ধশূণ্য ছিল। আমি ঘরে প্রবেশ করলাম এবং আমার বকরীগুলোর স্তন দুধে পরিপূর্ণ হয়ে গেল।

এখন থেকে আমার বকরীগুলো দুধে ভরপুর হয়ে ঘরে ফিরত এবং অন্যেরা তাদের জন্তুগুলি থেকে এক ফোটা দুধও পাচ্ছিল না।

আমার গোত্রের লোকেরা তাদের রাখালদেরকে বলতে লাগল, তোমরাও তোমাদের জন্তুগুলিকে ঐখানে ঘাস খাওয়াবে।

যেখানে হালিমা তাঁর বকরীগুলোকে ঘাস খাওয়ায়। কিন্তু এখানে তাে চারণভূমি ও জঙ্গলের কোন চিহ্ন ছিল না; বরং অন্য কোনো অমূল্য রত্নের খাতিরে তা গৃহীত হয়েছিল। ঐ বস্তু কোথায় পাবে?

সুতরাং ঐ জায়গায় চড়ানো সত্ত্বেও তাদের জন্তুগুলি দুধ শূন্য এবং আমার বকরীগুলি দুধে পরিপূর্ণ হয়ে বাড়ি ফিরতো।

এমনিভাবে আমরা সবসময় মহাবীর (সা.) বরকতসমূহ দেখতে ছিলাম। এমনকি দুই বৎসর পূর্ণ হয়ে গেল এবং আমি মহানবী (সা.)-এর দুধ ছাড়িয়ে দিলাম।” -(আস্-সালিহাত)

মহানবী (সা.) এর জন্মের পর প্রথম বাক্য।

হযরত হালিমা (রা.) বর্ণনা করেন যে, যে সময় আমি মহানবী (সা.) এর দুধ ছাড়ালাম, তখন তার বরকতময় জবান থেকে এই কয়টি বাক্য উচ্চারিত হয়েছিল ?

الله اکبر کبیرا والحمد الله حمدا كثيرا وسبحان الله بكرة واصيلا

এবং ইহাই ছিল তাঁর প্রথম বাক্য।
(বায়হাকী ও ইবনে আব্বাস ও হতে বর্ণনা করেন।) |

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *