যে কারণে আফগানিস্তান বিখ্যাত

আফগানিস্তান

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং খনিজ সম্পদে ভরপুর এক দেশ আফগানিস্তান। ইতিহাস বিখ্যাত মনিষী, যোদ্ধারা এ মাটিতে জন্মেছে। বিখ্যাত শাসক সুলতান মাহমুদ গজনবীর জন্ম স্থান এই আফগান। আফগানিস্তানের বিখ্যাত ছয়টি স্থানের সাথে আপনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিবো।

হেরাত জামে মসজিদ

আফগানিস্তানের উত্তর-পশ্চিম প্রবেশের হেরাত শহরে অবস্থিত একটি বিখ্যাত মসজিদ। মসজিদটি ঘুড়ি শাসক শাহ সুলতান গিয়াস উদ্দিন ঘুড়ি কর্তৃক নির্মিত হয়। তিনি ১২০০ খ্রিস্টাব্দে এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে অনেক শাসকদের দ্বারাই মসজিদটি সম্প্রসারিত হয়েছে।

হেরাত জামে মসজিদ
হেরাত জামে মসজিদ

১৫তম শতাব্দীর শেষের দিকে হেরাত জামে মসজিদের বর্তমান সংস্করণের রূপ দেওয়া হয়। হেরাত জামে মসজিদ শহরের প্রধান জামে মসজিদ। ভূমিকম্প ও অগ্নি কর্তৃক ধ্বংস হওয়া দুটি ছোট জরাস্ট্রিয়ান অগ্নি মন্দিরের উপর নির্মিত হয়।

ঘুড়ি শাসক গিয়াস উদ্দিন ১২০০ খ্রিস্টাব্দে একটি মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন এবং তার মৃত্যুর পর তার ভাই ও উত্তরসূরি মুহাম্মদ কর্তৃক মসজিদটির নির্মাণ কাজ চলতে থাকে।

বিষয়টি ১৯৬৪ সালে মসজিদটির পুনর্নির্মাণের সময় ঘুড়ি প্রবেশদ্বারের একটি শিলালিপি এবং ১৬তম শতাব্দীর তিমরুদের ঐতিহাসিক খাওয়ান্দমির এর খোলাসাত আল আকবর গ্রন্থ থেকে জানা যায়।

 

হেরাত দুর্গ

আফগানিস্তানের হেরাত দুর্গকে গত ২৩৩০ বছর ধরে পৃথিবীর বারোটি সাম্রাজ্য তাদের হেডকোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০ সালে আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট যখন আজকের আফগানিস্তান অভিযান চালান তখন এই দুর্গ নির্মাণ করেন। পার্থিয়ান, কুশান, সাসানিদ, সেলজুক, গজনবী, ঘুড়ি সাম্রাজ্যসহ প্রায় ১২ টি সাম্রাজ্যে সদরদপ্তর ছিল এই দৃষ্টিনন্দন হেরাত দুর্গ।

হেরাত দুর্গ
হেরাত দুর্গ

শহর-ই-জোহাক

শহর-ই-জোহাক (বাংলা আক্ষরিক অর্থ: ‘রক্ত নগরী’) আফগানিস্তানের বামিয়ান উপত্যকায় অবস্থিত একটি ত্রয়োদশ শতাব্দীর দুর্গের ধ্বংসাবশেষ।

উঁচু টিলায় অবস্থিত এই দুর্গটি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ধ্বংস হওয়া পূর্ব পর্যন্ত বামিয়ান উপত্যকা রক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত একটি শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হত।

শহর-ই-জোহাক
শহর-ই-জোহাক

ঘুড়ি সাম্রাজ্যে শাসনামলে বামিয়ান একটি শক্তিশালী ও মিশ্রিত সাম্রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হলে তা রক্ষার উদ্দেশ্যে এই দুর্গটি অত্যন্ত শক্তিশালী করে গড়ে তোলা হয়।

ঘুড়িদের পতনের পর সমগ্র বামিয়ান উপত্যকার সাথে সাথে এই দুর্গটি উত্তরের খাওয়ারিজম সালতানাতের অধীনে আসে। ১২২১ খ্রিস্টাব্দে চেঙ্গিস খানের মঙ্গল সেনা বামিয়ান উপত্যকায় প্রবেশ করলে তাদের হাতেই এই দুর্গের পতন ঘটে।

অবরোধ চলাকালীন দুর্গ থেকে ছোড়া একটি তীরে চেঙ্গিস খানের নাতি মুতুকানের মৃত্যু ঘটলে মঙ্গোলরা আক্রোশ বশত সমস্ত উপত্যকা জুড়ে গণহত্যা চালায়।

 


►► আরো পড়ুন: মহানবী ﷺ এর দুগ্ধপানের দিনগুলো

►► আরো পড়ুন:  হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে বিদ্বেষীদের জবাব

►► আরো পড়ুন: জোঁকের কামড়ের উপকারী দিক

►► রাসুল (সা.)-এর সীরাত সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন নবীজি.কম


এই যুগে সে সময় ৩০০০ মানুষ ছিল। তারা কেউই এই হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি। আজ এই দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ‘রক্ত নগরী’ নামটিও সম্ভবত এই গণহত্যার নারকীয়তা থেকেই উদ্ভূত।

এই নারকীয়তা ছিল এত ভয়াবহ যে, অন্তত চার দশক এই শহরে আর কোনো বসতি স্থাপন হয়নি।

পরবর্তীকালে যখন শহরটি আবার গড়ে ওঠে, এই দুর্গটি তার অতীতের সাক্ষী বয়ে একইভাবে পড়ে থাকে।

তার ধ্বংসাবশেষ ধ্বংসস্তূপের ওপর আর কোন পুনর্নির্মাণ চালানো হয়নি। বিখ্যাত বৌদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ বামিয়ানের ঐতিহাসিক পর্বতগাত্র থেকে পূর্বদিকে ১৫ কিলোমিটারর দূরে এই দুর্গটির ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত।

 

জামে মিনার

জামে মিনার পূর্ব আফগানিস্তান অবস্থিত ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটি হারি নদীর তীরে ঘোর রাজ্যের শাহরাক জেলায় অবস্থিত।

২৪০০ মিটার পর্যন্ত উঁচু পাহাড় বেষ্টিত ৬৫ মিটার উঁচু এই মিনার সম্পূর্ণ পোড়া মাটির ইট দিয়ে ১১৯০ সালে নির্মিত হয়েছে।

মিনারটি তার জটিল ইট, আস্তর এবং পালিশ করা টালি সজ্জার জন্য প্রসিদ্ধ, যার মধ্যে বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি যেমন: কুফিক, নাস্থা, বিভিন্ন জ্যামিতিক আকার এবং কুরআনের আয়াত খোদাই করা রয়েছে।

জামে মিনার
জামে মিনার

কাবুল

কাবুলে বসবাসরত জাতিগুলোর মধ্যে তাজিক জাতির লোকেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে পশতুন জাতির লোকেরা সংখ্যালঘু হলেও গুরুত্বপূর্ণ।

এই কাবুল একটি প্রাচীন নগরী হলেও ১৫০৪ সালে এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ঐ বছর ভারতীয় মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরুদ্দীন বাবর শহরটিকে নিজের তাঁর রাজধানী বানান।

কাবুল
কাবুল

১৫২৬ সালে সাম্রাজ্যের রাজধানী দিল্লীতে স্থানান্তরিত করা হলেও কাবুল মুঘল সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল।

১৭৩৮ সালে পারসিক নাদির শাহ শহরটি দখল করেন। ১৭৪৭ সালে আফগানিস্তানের প্রথম আমির আহমদ শাহ আবদালী কাবুলকে দুটি রাজধানীর একটি বানান। অপর রাজধানী ছিল দক্ষিণের কান্দাহার শহর।

১৭৭৩ সালে আহমদ শাহ আবদালীর মৃত্যুর পর কাবুল দেশের একমাত্র রাজধানীতে পরিণত হয়। ঊন বিংশ শতকে খাইবার গিরিপথের নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রিটিশ।

পারসিক এবং রুশদের দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।। এই শতকে ব্রিটিশ সেনারা দুইবার কাবুল দখল করে। ১৯৪০ সালের পর শিল্পকেন্দ্র হিসেবে কাবুলের বিকাশ ঘটে।

পাঞ্জাশির

আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের এই একটি পাঞ্জাশির। পাঞ্জাশিরের অর্থ: পাঁচ সিংহ। বলা হয়, দশর মতকে এই প্রদেশে পাঁচ ভাই মিলে বন্যার জর ধরে রেখেছিল একটি বাঁধ নির্মাণ করে।

জনশ্রুতি রয়েছে, সুলতান মাহমুদ গনজবীর নির্দেশে সেই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই পাঁচ ভাইয়ের সম্মানে এই প্রদেশকে পাঞ্জাশির নামে নামকরণ করা হয়।

আহমদ শাহ মাসউদ প্যালেস
আহমদ শাহ মাসউদ প্যালেস

এই প্রদেশ প্রাকৃতিক একটি দুর্গ। চতুর্দিকে হিন্দুকুশের পর্বত। মাঝে এক টুকরো সমতল ভূমি। এই প্রদেশে মোট ১,৭৩,০০০ মানুষ বসবাস করে।

এদের অধিকাংশই জাতিতে তাজিক । দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে তাজিকদের। মূল জাতিগত ভাবে তারা যোদ্ধা মনোভাবের। সমর বিদ্যাই তাদের প্রধান শক্তি।

আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রাচীনকাল থেকেই বার বার আলোচনায় উঠে এসেছে পাঞ্জাশির। কারণ আর কিছুই নয়, ভৌগলিক এবং কৌশলগত অবস্থানের কারণেই কোনো বিদেশী শক্তিই এর নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি।

আজ থেকে ২৫০০ বছর পূর্বে আলেকজান্ডার পারস্য জয় করেন। সে সময় তারই নেতৃত্বে পাঞ্জাশির উপত্যকা দখল করতে চেয়েছিল গ্রিক সেনারা। কিন্তু জয় করতে পারেনি। অবশেষে নিজ থেকে স্থানীয় গোত্রগুলোর সঙ্গে সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন আলেকজান্ডার ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *